চট্টগ্রাম নগরের বিবিরহাট পশুর বাজারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরছিলেন তিন যুবক। কোরবানির পশু কিনতে নগরের এই হাটে এসেছেন পাশের উপজেলা হাটহাজারী থেকে। গরু পছন্দ হয় তো দামে বনিবনা হয় না। আবার দাম আয়ত্তে থাকলে গরুর আকার ও রং মনে ধরছিল না তাঁদের। তবে হাল ছাড়েন না তাঁরা তিনজন। শেষ পর্যন্ত যখন সাধ্যের মধ্যে পছন্দের গরু কেনেন, তখন পেরিয়ে যায় দুই ঘণ্টা।
আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটায় নগরের বিবিরহাট পশুর বাজারে এই দৃশ্য দেখা যায়। তিনজনের একজন মোহাম্মদ রুবেল। হাটহাজারী সদর এলাকার এই বাসিন্দা বলেন, আরও দুই-তিন দিন আগে কোরবানির গরু কেনার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির জন্য বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। আজ আবহাওয়া ছিল তুলনামূলক ভালো। দুই বন্ধুকে নিয়ে নগরে চলে আসেন গরু কিনতে। গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা বেশি মনে হয়েছে। তাই দরদাম করে পছন্দের গরু কিনতে বেগ পেতে হয়েছে।
বিবিরহাট পশুর হাটে ১৬টি গরু নিয়ে গত শনিবার বিকেলে কুষ্টিয়া থেকে এসেছেন ব্যাপারী সাজ্জাদ আলী। মঙ্গলবার পর্যন্ত দুটি গরু বিক্রি করেন তিনি। বাকিগুলোও আগামী শুক্রবারের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশাবাদী এই ব্যাপারী। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন হাটে মানুষই ছিল না। এখন হাটে মানুষ আসতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ গরু কিনছেন। তবে অধিকাংশ দরদাম করে না কিনেই হাট থেকে ফেরত যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম নগরে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার। স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে নগরের বিভিন্ন প্রান্তে মোট ১৩টি হাট বসেছে। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের কারণে শুরুর দিন থেকে নগরের আবহাওয়া ছিল প্রতিকূলে। প্রতিদিন টানা ভারী বর্ষণে নগরের হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। অবশ্য প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু-ছাগল নিয়ে হাটগুলোতে চলে এসেছেন ব্যাপারীরা।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কমে আসে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টি তেমন ছিল না। দুপুর থেকে আকাশে সূর্যের দেখা মেলে। এমন অনুকূল আবহাওয়ায় হাটে আসতে শুরু করেন ক্রেতারা। বিক্রিও শুরু হয়েছে। গতবারের মতো এবারও মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি। বিশেষ করে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা দামের গরুর বিক্রি বেশি। ক্রেতারা বলছেন, এবার গরুর দাম বেশি মনে হচ্ছে। যে গরু এক থেকে দেড় লাখ টাকা, ব্যাপারীরা সেটির দাম দিচ্ছেন দুই-আড়াই লাখ টাকা। তাই দাম কমে কি না আরও এক-দুদিন দেখবেন। তারপর গরু কিনবেন।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা নগরের সাগরিকা, বিবিরহাট ও কর্ণফুলী পশুর হাটে গিয়ে এসব দৃশ্য দেখা যায়। ব্যাপারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম নগরের হাটগুলোতে বেচাবিক্রি খারাপ না। তবে পুরোপুরি জমে উঠবে বুধ-বৃহস্পতিবার থেকে। কেননা এর মধ্যে অফিস-আদালত ছুটি হতে শুরু করবে। লোকজনের কাজের ব্যস্ততাও কমবে। তাঁরা হাটে আসা শুরু করবেন।
নগরের অক্সিজেন এলাকা থেকে কর্ণফুলী পশুর বাজারে আসেন চাকরিজীবী হামিদ হোসেন ও আরাফাত হোসেন। তাঁরা বলেন, আজকেই গরু কিনবেন এ রকম ইচ্ছা নেই। তবে বাজারে কেমন গরু এসেছে, দরদাম কেমন তা দেখতে এসেছেন। এখানে গরুর দাম বেশি মনে হচ্ছে। ব্যাপারীরা যে দাম দিচ্ছেন, তা থেকে নড়ছেন না। আরও একটি-দুটি হাটে যাবেন। এবার মাঝারি আকারের গরু কেনার ইচ্ছা রয়েছে। দরদামে মিললে বৃহস্পতিবার নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। কেননা বাসায় গরু রাখার একটু ঝামেলা আছে। তাই এখনই নিচ্ছেন না।
চট্টগ্রামে ১২ বছর ধরে কোরবানির পশু বিক্রি করতে আসছেন নাটোরের ব্যাপারী মামুন হোসেন। এবার এনেছেন ১৮টি গরু। যদিও মঙ্গলবার পর্যন্ত মাত্র বিক্রি হয়েছে একটি। তিনি বলেন, শহর এলাকায় বাজার জমে কোরবানির দু-তিন দিন আগে। তাঁরাও এখন সে সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। এখন মানুষ বাজারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ক্রেতারা এখনো তাঁদের (ব্যাপারীদের) প্রত্যাশা অনুযায়ী দর দিচ্ছেন না। যে গরুর দাম দেড় লাখ টাকা, সেটির দর দিচ্ছেন ৮০-৯০ হাজার টাকা। এত কম দামে বিক্রি সম্ভব নয়। তবে কাল-পরশু থেকে পরিস্থিতি এ রকম থাকবে না। তখন বেচাবিক্রি পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন