২০২৪ সালের ১৫ জুলাইয়ের ভোররাতে, যখন শহর ঘুমিয়ে ছিল, তখনই জ্বলে উঠল বাংলাদেশের সব ক্যাম্পাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শুরু হয় সেই আগুনের প্রথম স্ফুলিঙ্গ। ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার!’—এই স্লোগানে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
কোটা ইস্যুতে আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন তাদের সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বিতর্কিত মন্তব্য। তিনি বলেন—‘মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরাও পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?!’’
আর এই কথার প্রতিক্রিয়ায় দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ছাত্র-আন্দোলনের জন্ম হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিতর্কিত ‘রাজাকার’ মন্তব্যের জের ধরে যখন সারা দেশের ক্যাম্পাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে,
তখন পাল্টা তোপ দাগেন মন্ত্রী-এমপিরা!
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন —
“যারা শেখ হাসিনার কথা বিকৃত করে রাজু ভাস্কর্যের পবিত্র মাটিতে দাঁড়িয়ে নিজেদের ‘রাজাকার’ বলেছে— তারা বিকৃত মানুষিকতার, তাদের এই বাংলার মাটিতে জায়গা হবে না।‘’
সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা যায়, আন্দোলন দমন করতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে চালানো হয় রক্তাক্ত হামলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, সাস্ট, কুমিল্লাসহ একাধিক ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে চালানো হয় পরিকল্পিত আক্রমণ।
বিশেষ করে রাতভর জাহাঙ্গীরনগরে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। ‘ছাত্ররাজনীতি’র নামে রাষ্ট্র যখন শিক্ষার্থীর শরীরে টিয়ারশেল, ইট-লাঠি চালায়, তখন গর্জে ওঠে দেশ।
শুধু পাবলিক না, আন্দোলনে একাত্ম হয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। বসুন্ধরা, প্রগতি সরণি, কুড়িল, বাড্ডা—ঢাকার রাজপথ জুড়ে জ্বলে ওঠে মিছিল, স্লোগান, প্রতিবাদ।
পুলিশ যখন শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের জমায়েত ঠেকিয়ে দেয়, তখনই স্পষ্ট হয়—এই আন্দোলন কেবল কোটা সংস্কারের না, এটা সম্মানের লড়াই!
এই দিন শেষে, আমরা পেলাম ১৫ জুলাই—নতুন এক নাম, নতুন এক ইতিহাস। ১৫ জুলাইয়ের নাম আজ ইতিহাসে এক নতুন পরিচয়ে জ্বলজ্বল করে।
মন্তব্য করুন