অক্টোবরে তিন পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ না করার জন্য পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। - প্রজন্ম ২৪ বিডি
প্রজন্ম ২৪ বিডি
৭ অক্টোবর ২০২৪, ৪:২৩ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

অক্টোবরে তিন পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ না করার জন্য পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

চলতি অক্টোবর মাসে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় ভ্রমণ না করার জন্য পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

পাহাড়ে চলমান অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে এ বছর রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘কঠিন চীবরদান’ উদযাপন না করার ঘোষণা দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ।
রোববার দুপুরে রাঙামাটি শহরের মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারের দেশনালয়ে এই ঘোষণা দেন সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালঙ্কার মহাথের। তখন তিন পার্বত্য জেলার ১৫টি বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের প্রতিনিধিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের যে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে প্রশাসনের আচরণ ছিল ‘রহস্যজনক’।
“পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর এভাবে বিনা বাধায় সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পবিত্র বিহারে আক্রমণ ও বৌদ্ধমূর্তি ভেঙে ফেলার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এ ধরনের ঘটনা বারবার সংঘটিত হলেও প্রশাসনের আচরণ রহস্যজনক ও পক্ষপাতদুষ্ট,” বলেন মি. মহাথের।
পার্বত্য অঞ্চলে এখন পর্যন্ত যতগুলো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর কোনোটির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
“পাহাড়ে চলমান সহিংসতা এবং এটি থামানোর লক্ষ্যে প্রশাসনের তরফ থেকে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ না দেখা এবং আইনশৃঙ্খলার চরম অব্যবস্থাপনা ও অবনতি দেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষু সংঘ বর্তমানে খুবই উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত হওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতা এবং প্রশাসনের ওপর আস্থাহীনতা বোধ করছি”
“এরকম চরম অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষু সংঘ আসন্ন পবিত্র ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে কোনও উৎসাহ বোধ না করায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শ্রদ্ধাবান দায়িক-দায়িকা ও পূজনীয় ভিক্ষু সংঘের মধ্যে আলোচনাক্রমে চলতি বছরের কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান না করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি,” সাংবাদিকদের বলেন মি. মহাথের।
উল্লেখ্য যে, আশ্বিনী পূর্ণিমাকে প্রবারণা পূর্ণিমা বলা হয়। প্রবারণা পূর্ণিমার পর থেকে এক মাসের জন্য কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়।
এক মাস ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় দুইশ বিহারে ধারাবাহিকভাবে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা, সুতা থেকে চীবর (ভিক্ষুদের পরিধেয় কাপড়) তৈরি করা হয়। এই অনুষ্ঠান ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক মাস ধরে উৎসব পালিত হয়। আশ্বিনী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলে।
এবছর আগামী নভেম্বর মাসে প্রথম সপ্তাহ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাসব্যাপী বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠিত হওয়া কথা।
অন্যদিকে, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

অনিবার্য কারণ’ দেখিয়ে চলতি অক্টোবর মাসে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় ভ্রমণ না করার জন্য পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
রোববার পৃথক বার্তায় এই অনুরোধ জানিয়েছে ওই তিন পার্বত্য জেলার প্রশাসন।
এদিন বিকেলে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বার্তায় আগামী আটই অক্টোবর থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ থেকে পর্যটকদের বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
“সার্বিক পরিস্থিতি এবং পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাঙামাটিতে পর্যটকদের ভ্রমণ না করার জন্য আমরা আহ্বান করছি। পর্যটকদের সাময়িক এই অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি,’ সাংবাদিকদের বলেছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।
খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে।
পাহাড়ের চলমান পরিস্থিতির কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান।
উল্লেখ্য যে, মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে বাঙালি এক ব্যক্তির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়িতে এক স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনার পর সহিংসতা ঠেকাতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
পরদিন ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হলেও এখনও পুরোপুরি শান্ত হয়নি পরিবেশ, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তিন পার্বত্য জেলার পর্যটন শিল্পের ওপর।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোটের মাঠ সমতল থাকলে রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন হবে : জামায়াত আমির

নির্বাচনের সময়সীমা ও ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ

‘স্যার পাঁচ বছর, দালালদের কথা শুনবেন না’

এপ্রিল মাস নির্বাচনের জন্য অনুপযুক্ত

দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা প্রধান উপদেষ্টার

জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত: বিশেষ মোনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা

জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত

পবিত্র ঈদুল আজহা আজ

নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, সন্তোষ প্রকাশ জামায়াতের

ঈদের দিন বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা

১০

ঈদ করছেন কোথায় জামায়াতের শীর্ষ নেতারা?

১১

চাঁদাবাজি নিয়ে যা বললেন রিজভী

১২

জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘোষণা করলেন প্রধান উপদেষ্টা

১৩

ঈদে বর্জ্য অপসারণে ঢাকায় থাকবে এনসিপির স্বেচ্ছাসেবক

১৪

রাজধানীতে কখন কোথায় ঈদ জামাত

১৫

সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস

১৬

সময়মতো লঞ্চ না ছাড়লে ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৭

ঈদের পর কঠোর আন্দোলনে নামছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা

১৮

ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই : ডিএমপি কমিশনার

১৯

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সচেষ্ট রয়েছে সরকার : উপদেষ্টা আসিফ

২০