সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিতে শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। মানবিক ও ভালো মানুষ না হলে দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। শুধু ভালো প্রকৌশলী তৈরি করলেই হবে না, আমাদের ভালো মানুষও তৈরি করতে হবে। একজন ভালো মানুষ তৈরিতে একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
নৈতিকতা ও ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা যদি না থাকে, তাহলে প্রকৃত অবদান রাখা সম্ভব নয়। নৈতিক শিক্ষা ও ভালো মানুষ হলেই দেশ উপকৃত হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি) ‘মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স’ বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেনাপ্রধান বলেন, শুধু ভালো প্রকৌশলী হয়ে নয়, একজন সৎ এবং শৃঙ্খলাবোধসম্পন্ন মানুষ হয়েই আপনি দেশের জন্য অবদান রাখতে পারবেন।
আমরা অনেক ভালো শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সামরিক অফিসার তৈরি করছি। কিন্তু যদি তাদের নৈতিক শিক্ষা না থাকে, যদি তারা ভালো মানুষ না হয়, তাহলে দেশ তার কাছ থেকে প্রকৃত উপকার পাবে না।
তাই আমি সব সময় আপনাদের শৃঙ্খলাবোধ শেখার জন্য উৎসাহ দিই, ভালো মানুষ হওয়ার জন্য উৎসাহ দিই। আর অবশ্যই আপনার মেধা দিয়ে আপনি হবেন একজন অসাধারণ প্রকৌশলী।
আপনারা হবেন এ দেশের গর্বিত নাগরিক।
তিনি বলেন, এই ফোরামটি একটি আন্ত বিষয়ক সংলাপ, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং বাস্তব সমস্যার নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাধানের উৎসাহদাতা হিসেবে কাজ করেছে।
আমি বিশ্বাস করি, এই সম্মেলন একটি গতিশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে, যেখানে বৈচিত্র্যময় ধারণার আদান-প্রদান, একাডেমিক আলোচনাসভা এবং যান্ত্রিক ও প্রায়োগিক বিজ্ঞান শাখার পথপ্রদর্শক গবেষণা উপস্থাপন করা হয়েছে। এই সম্মেলন নিঃসন্দেহে আপনাদের নতুন কিছু শিখতে, নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রাণিত হতে সাহায্য করবে।
সেনাপ্রধান আরো বলেন, আমি সব প্রতিনিধি, গবেষক ও অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
জ্ঞানকে এগিয়ে নিতে এবং গঠনমূলক আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে আপনারা যে আন্তরিকতা ও আগ্রহ দেখিয়েছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা ভবিষ্যতে আপনাদের আবারও স্বাগত জানাতে চাই। শিক্ষার্থী ও উদীয়মান গবেষকদের প্রতি আমি বলব, সীমারেখা ভেঙে সামনে এগিয়ে চলুন, কৌতূহলী থাকুন এবং উদ্ভাবনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকুন। এ ধরনের সম্মেলনগুলো আপনার একাডেমিক ও পেশাগত জীবনের একটি সোপান। আপনারা এই ফোরাম থেকে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করুন।
উল্লেখ্য, উক্ত সম্মেলনে বাংলাদেশসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রুনেই, মিসর, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, জাপান, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর, চীন এবং আমিরাতের খ্যাতনামা গবেষক ও পেশাজীবীরা অংশগ্রহণে করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেরা প্রবন্ধ উপস্থাপনকারীদের পুরস্কৃত করেন।
সম্মেলনে যন্ত্রকৌশল, উৎপাদন প্রকৌশল, অ্যারোনটিক্যাল ও নেভাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রায়োগিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন—উৎপাদন প্রকৌশল, নবায়নযোগ্য শক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্টারনেট অব থিংস, তাপ প্রকৌশল, মহাকাশ ও অ্যাভিওনিকস, অ্যারোডাইনামিকস, হাইড্রোডাইনামিকস, কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডাইনামিকস, ডিজাইন ও উৎপাদন, মেকাট্রনিকস, রোবটিকস ইত্যাদি বিষয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা, প্রবন্ধ উপস্থাপন ও ফলপ্রসূ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষক, প্রকৌশলী, উদ্যোক্তা ও শিক্ষার্থীদের একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির সুযোগ হয়েছে, যা ভবিষ্যতে যন্ত্রকৌশল ও প্রায়োগিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবন ও টেকসই উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন করবে এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ।
মন্তব্য করুন