যখন বুলেট ছুটে আসে, ভবন ধসে পড়ে, বিদ্যুৎ চলে যায়। তখনও এক দেশ তার সম্প্রচারে খবর পাঠায়। কারণ, সত্য বলা থেমে গেলে। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর পথটাও। বন্ধ হয়ে যায়। আর এই সত্য বলার। দৃঢ় প্রতীক হয়ে উঠেছেন। একজন নারী উপস্থাপিকা। যার নাম সাহার এমামি।
গত ১৬ জুন, যুদ্ধকালীন সময়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আইআরআইবি সরাসরি সম্প্রচারে ছিল। উপস্থাপিকা সাহার এমামি লাইভ অনুষ্ঠানে ছিলেন ক্যামেরার সামনে। ঠিক তখনই ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় টেলিভিশন ভবনে। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে স্টুডিও, সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। চারপাশে ধ্বংস, আতঙ্ক আর মৃত্যুর বিভীষিকা।
কিন্তু থেমে যাননি সাহার। কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি ফিরে আসেন—ঠিক একই স্টুডিওতে, একই ডেস্কে, আবার ক্যামেরার সামনে। তার কণ্ঠে ছিল না কোনো শঙ্কা, ছিল প্রতিরোধের স্পষ্ট ভাষা। তার সংবাদ পাঠ তখন আর শুধুই খবর ছিল না—সেটি ছিল যুদ্ধের মুখে সাংবাদিকতার সাহসিক আত্মপ্রকাশ।
এই সাহসিকতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এসেছে ভেনেজুয়েলা থেকে। দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ২৭ জুন, জাতীয় সাংবাদিক দিবসে সাহার এমামি এবং আইআরআইবির নিহত সাংবাদিকদেরকে ‘সিমন বলিভার পুরস্কার’ প্রদান করেন। সাহারের পক্ষ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেনইরানে নিযুক্ত ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত।
পুরস্কার ঘোষণার সময় মাদুরো বলেন, যখন বিশ্ব চুপ থাকে, তখন কিছু কণ্ঠ সত্যের পক্ষে দাঁড়ায়। সাহার এমামির সেই কণ্ঠ সাংবাদিকতার সম্মানের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সাহার এমামির ফিরে আসা ছিল এক জাতির প্রতিরোধের বার্তা, ছিল সাংবাদিকতার পক্ষেএক অনমনীয় ঘোষণা। তিনি আজ শুধু একজন উপস্থাপিকা নন, সাংবাদিকতার পেশাগত সততা ও নৈতিক সাহসের জীবন্ত প্রতীক।
মন্তব্য করুন