উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে করে তলিয়ে গেছে চরের শতাধিক কৃষিক্ষেত। নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তিস্তার নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা প্রকাশ করে রোববার দেওয়া পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
পাউবো কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকায় ১৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তিস্তার পানি রংপুরের কাউনিয়া গেজ স্টেশনে ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। ওই সময়ে পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ জানায়, রোববার ভোর থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। ডালিয়া পয়েন্টে পানি এখন বিপৎসীমার মাত্র ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, “আমরা পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখছি। স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”
লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাদল জানান, উজানের ঢলে ইতোমধ্যে অনেক চরের ফসল তলিয়ে গেছে। তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা কুদ্দুস মিয়া বলেন, “আমরা নদীর পাড়ে বসবাস করি। প্রতিবারই বর্ষা মৌসুমে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ায় আমাদের এলাকায় হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। খরা হলে গেট বন্ধ করে রাখা হয়, আর বর্ষায় পানি ছেড়ে আমাদের ভাসিয়ে দেয়।”
এদিকে নীলফামারী জেলা সদরের কালিতলা ভাট্টাতলি এলাকায় তিস্তা সেচ প্রকল্পের বামতীর বাঁধ ভেঙে পড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সেচ কার্যক্রম। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় প্রায় ৩০ একর জমির রোপা আমন, ঢ্যাঁড়শ, মরিচ ও বিভিন্ন শাকসবজি পানিতে তলিয়ে গেছে।
নীলফামারী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান জানান, রাতের ভারী বৃষ্টিতে পাড়ে মাটির চাপ পড়ে এবং ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি প্রবেশ করে বাঁধের ৩০ ফুট অংশ ভেঙে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে জিও ব্যাগ ও মাটি ফেলে মেরামতের কাজ চলছে।
কৃষক ইউনুছ আলী বলেন, “বৃষ্টিপাত না থাকায় সেচের পানির চাপ বেড়ে যায়। ভারী বৃষ্টির ফলে গর্তে ফাটল ধরে, তারপর হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙে যায়।” কৃষক মোজাম্মেল আলী বলেন, “আমার ৫ বিঘা রোপা আমনের খেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সব শেষ।”
তিস্তা অববাহিকার মানুষেরা আশঙ্কা করছেন, যদি পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে তবে বড় ধরনের বন্যা দেখা দিতে পারে, যার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ভয়াবহ।
মন্তব্য করুন