২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আপিলের রায় আজ ঘোষণা করা হবে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর), প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ রায় ঘোষণা করবেন।
উল্লেখ্য, ওইদিনের হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভয়াবহ ওই হামলায় নিহত হন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন, আহত হন শতাধিক মানুষ। ঘটনাটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ভয়াবহ কলঙ্কচিহ্ন হিসেবে বিবেচিত।
হামলার পর মতিঝিল থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়—একটি হত্যা মামলা এবং আরেকটি বিস্ফোরক আইনে। শুরু থেকেই মামলার তদন্ত নিয়ে নানা বিতর্ক ছিল। পরে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নতুন করে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। ২০০৮ সালে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর তদন্ত আরও সম্প্রসারিত হয় এবং তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনকে নতুন করে আসামি করা হয়। এরপর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করা হয়। এতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্য ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করে। হাইকোর্ট সব আসামিকে খালাস দেয়। রায়ে বলা হয়, মামলার তদন্ত যথাযথ, পেশাদার ও নিরপেক্ষভাবে হয়নি; ফলে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। হাইকোর্ট নতুন করে নিরপেক্ষ তদন্তের পরামর্শ দেয় এবং নথিপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। তাদের দাবি, বিচারিক আদালতের রায় যথাযথ ছিল এবং তা বহাল থাকা উচিত। অন্যদিকে, আসামিপক্ষ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে।
আপিল বিভাগের শুনানি শুরু হয় ২০২৫ সালের ১৭ জুলাই এবং ২১ আগস্ট পর্যন্ত কয়েক ধাপে তা অনুষ্ঠিত হয়। আজ সেই বহুল আলোচিত মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাদাত মো. সায়েম ভূঞা ও সাদিয়া আফরিন। আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।
মন্তব্য করুন