ইরানে মোসাদের লোমহর্ষক অভিযান, ২৭ সিন্দুক পরমাণু নথি চুরি - প্রজন্ম ২৪ বিডি
Abdullah al Masum
১৩ জুন ২০২৫, ৩:৩২ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

ইরানে মোসাদের লোমহর্ষক অভিযান, ২৭ সিন্দুক পরমাণু নথি চুরি

মোসাদের অভিযানে প্রতীকী ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন ৭ জন পরমাণু বিজ্ঞানী। গত ২০ বছরের হিসাব এটি। শুধু ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এই ২ বছরে ৪ জন ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে মোসাদ। এসব হত্যাকাণ্ডে যেসব অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছে মোসাদ তা সত্যি চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো।

শত্রুকে শেষ করতে নির্ভুল নিশানায় বরাবরই সফল মোসাদ। সংস্থাটি ইরানের নামকরা পরমাণু বিজ্ঞানী মুখসেন ফকরিজাকে হত্যা করতে ব্যবহার করেছিল কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত রিমোট কন্ট্রোলড মেশিনগান। এ ছাড়া গুপ্তহত্যায় বিষাক্ত গ্যাস বা ম্যগ্নেটাইড বোমার মতো ভয়ংকর অস্ত্রের ব্যবহারেও সিদ্ধহস্ত ইসরায়েলের এ গোয়েন্দা সংস্থাটি।

তবে ইরানের সুরক্ষিত পারমাণবিক কেন্দ্রে প্রবেশ করে অন্তত আধা টন গোপন তথ্য এক রাতের মধ্যে যেভাবে চুরি করে এনেছিল মোসাদ এজেন্টরা তা সম্ভবত মোসাদের পরিচালিত সব অপারেশনকে ছাপিয়ে যাবে। মোসাদের এই শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান গোয়েন্দা জগতের বিরাট এক বিস্ময়ই বলা চলে।

আজকের ইরান-ইসরায়েলের মাঝে যে চরম বৈরি সম্পর্ক অতীতে কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল না। ইসরায়েলের জন্মলগ্নে ইরান এবং ইহুদিবাদী এ দেশটি ছিল একে অপরের বন্ধু। এমনকি ১৯৪২ সালে যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়, তখন তুরস্কের পর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া দ্বিতীয় মুসলিম দেশটি ছিল ইরান।

১৯৫০ সালে ইসরায়েলকে এ স্বীকৃতি দেয় তেহরান। ক্রমে দুই দেশের মধ্যে গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক এমনকি সামরিক সম্পর্কও। আরও অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে মোসাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতাতেই ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা সাভাক।

দুই দেশের গভীর এ সম্পর্ক ভেঙে পড়ে মূলত ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর। সেই সময় ক্ষমতায় আসা ইরানের বিপ্লবী সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নেওয়ার ঘোষণা দেয়। শিয়া সম্প্রদায়ের তৎকালীন আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ খামিনি এবং তার অনুসারীরা ছিলেন ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পুরোপুরি বিরুদ্ধে।

ক্ষমতায় এসেই ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করতে তেহরানে অবস্থিত ইসরায়েলের দূতাবাসকে ফিলিস্তিনি দূতাবাসে পরিণত করে ইরান সরকার। পাশাপাশি ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তারা। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে মূলত ইরানের বিপ্লবী সরকার ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে বসে।

ইসরায়েলের ব্যাপারে ইরান সরকারের নীতি পরিবর্তন দুই দেশের সম্পর্ক ধীরে ধীরে শীতল হতে শুরু করে। একই সময়ে অন্য আরব দেশগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সমস্যা সমাধানে একমত হলেও আয়াতুল্লাহ খামিনি এ সম্ভাবনাকে কখনই গ্রহণযোগ্য মনে করেননি। ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবেই অস্বীকারের নীতি বেছে নেয় ইরান। অন্যদিকে দিনে দিনে ইরানের উত্থানকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে ইসরায়েল।

ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পেছনে ২টি কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। প্রথমত, ইরানের দূর পাল্লার মিসাইল তৈরির চেষ্টা ও দ্বিতীয়ত পরমাণু প্রকল্প গ্রহণ। আসলে দ্বিতীয় কারণটিই যে ইসরায়েলের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইরানের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বিশেষত পরমাণু প্রকল্প ভেস্তে দিতে নানা অন্তর্ঘাতমূলক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে ইসরায়েল। প্রথম পদক্ষেপে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের টার্গেট করে মোসাদ। পরমাণু প্রকল্পের শীর্ষ বিজ্ঞানীরা গুপ্ত হত্যার শিকার হতে থাকেন একের পর এক। এর পাশাপাশি তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির দিকেও নজর রাখতে শুরু করে তেল আবিব।

২০১৬ সালের দিকে মোসাদের কাছে খবর আসে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচির সব কাগজপত্র তেহরানের উপকণ্ঠে একটি গোপন স্থানে সরিয়ে ফেলেছে। তখন মোসাদের তৎকালীন প্রধান ইরানে নিযুক্ত মোসাদের আন্ডারকাভার এজেন্টদের ওই গোপন গুদামের ওপর নজর রাখতে বলেন। এ ছাড়া তিনি ওই দলিলপত্র যত দ্রুত সম্ভব ইসরায়েলে নিয়ে আসার প্রস্তুতির নির্দেশ দেন তিনি।

এরপর তানা ২ বছর ওই গুদামের ওপর নজর রাখে মোসাদ। এ সময়ের মধ্যে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে জেনে নেয় ইসরায়েলের গোয়েন্দারা। ২০১৮ সালের জানুয়ারির শেষ ভাগ রাত ১০টার কিছু পর ওই গুদামে গোপনে হামলা করে প্রায় ১ ডজন লোক। ৩২টি ভোল্ট ভেঙ্গে তারা আবিষ্কার করে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ইরানের কয়েক বছরের কাজের নথি, ডিজাইন ও তৈরির পরিকল্পনা।

ইরানের ইতিহাসে এটি ছিল সবচেয়ে দুঃসাহসিক এক চৌর্যবৃত্তির ঘটনা। এরপর ইরান যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এসব নথি দেখান নেতানিয়াহু। এ ঘটনায় ইরান কোনো বক্তব্য না দিলেও ২০২১ সালে অবশেষে তারা স্বীকার করে নেন তাদের নথি হারানোর ঘটনা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জানাজা শেষে পাইলট তৌকিরের মরদেহ রাজশাহীর পথে

আহতদের চিকিৎসায় জামায়াতের ৫০ লাখ টাকা ও ২০ সার্জন নিযুক্ত

বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে উপচে পড়া ভিড়

আহতদের চিকিৎসায় সিঙ্গাপুরের মেডিকেল টিম

মেহেরীন চৌধুরী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাতিজি

মাইলস্টোন ট্রাজেডিতে শোক কর্মসূচি ক্রীড়া সংগঠনগুলোর

৬ দফা দাবিতে উত্তাল মাইলস্টোন

মাইলস্টোনে গিয়ে তোপের মুখে আইন উপদেষ্টা

রাজশাহীতে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তৌকির

নিহতদের সম্মানে দুপুরের পর বন্ধ থাকবে হাইকোর্টের বিচারকাজ

১০

বিমান দুর্ঘটনায় ব্রিটিশ মন্ত্রীর শোক প্রকাশ

১১

আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে সরকার: স্বাস্থ্য উপদেষ্টার

১২

বিয়ের বছর না ঘুরতেই চলে গেলেন পাইলট তৌকির

১৩

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতিসংঘের সমবেদনা

১৪

পরিবারের কাছে হস্তান্তর ৮ মরদেহ

১৫

হতাহতের সংখ্যা গোপনের দাবি সঠিক নয় : প্রেস উইং

১৬

ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস

১৭

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: রাষ্ট্রীয় শোক আজ

১৮

বিমান বিধ্বস্তে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭, চিকিৎসাধীন ৭৮

১৯

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত আজ

২০