১. ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ ও জাতির ক্রান্তিকাল:
৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি। ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার যে স্লোগান উচ্চারিত হয়েছিল, তার বাস্তব প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এ সময়টিতে জাতি যেমন আশা করেছিল একটি সুশাসনমুখী, জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্রের, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোতেও গণতান্ত্রিক শুদ্ধি প্রক্রিয়ার সূচনা হবে—কিন্তু বাস্তবে চিত্র ভিন্ন।
২. বিদেশে বসে দল চালানো, জাতির সঙ্গে তামাশা:
তারেক রহমান লন্ডনে থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিকে ‘নেতৃত্ব’ দিয়ে যাচ্ছেন। দল পরিচালনার এমন পদ্ধতি আসলে জনগণের সঙ্গে তামাশার শামিল। দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে রাজনীতি না করে, বিদেশের নিরাপদ আশ্রয় থেকে ভার্চুয়ালি নেতাকর্মীদের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা একটি পরনির্ভরশীল, দায়িত্বহীন নেতৃত্বেরই প্রমাণ। প্রশ্ন হচ্ছে, যার নিজেরই দেশে ফেরার সাহস নেই, তিনি কীভাবে জনগণের জন্য লড়বেন?
৩. বিএনপির অভ্যন্তরে ভারতীয় দালালির অভিযোগ:
বিএনপির অভ্যন্তরে ভারতঘেঁষা একটি চক্র অনেকদিন ধরেই গোপনে সক্রিয় বলে দলের অনেক নেতাই চাপা স্বরে অভিযোগ করেন। রাজনৈতিক টিকে থাকার জন্য বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ থেকে শুরু করে ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ের ছদ্ম-সমর্থন পাওয়ার চেষ্টাও এই দলের ভেতরের নীতি-সংকটেরই বহিঃপ্রকাশ। এ কারণে বিএনপির প্রকৃত জাতীয়তাবাদী চেতনাও প্রশ্নবিদ্ধ।
৪. সারাদেশে যুবদল-ছাত্রদলের লাগামহীন চাঁদাবাজি:
ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের একাংশ এখন ‘চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটে’ পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ী, পরিবহন, এমনকি স্থানীয় ছোট ছোট দোকান পর্যন্ত এদের চাঁদার খপ্পরে পড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দলীয় শাস্তি বলতে মাঝে মধ্যে ‘প্রশাসনিক’ বহিষ্কার—কিন্তু আসলে এরা ফের মঞ্চে ফিরে আসে অন্য নামে বা অন্য জেলার ট্যাগ লাগিয়ে।
৫. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীরবতা ও আইনশৃঙ্খলা:
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। হ্যাঁ, মাঝে মাঝে দুই-চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, কিংবা কয়েকটি মামলার কাগজপত্র সাংবাদিকদের দেখানো হয়। কিন্তু সারা দেশের চাঁদাবাজি, ত্রাস, অরাজকতা দমনে কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেই। পুলিশ-প্রশাসন কার্যত পূর্বের মতোই ঢিলেঢালা। ফলে জনগণ দিনের পর দিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
৬. দেশজুড়ে অনিশ্চয়তা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রশ্ন:
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, দলীয় শৃঙ্খলা এবং ন্যূনতম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো এক অনিশ্চয়তার মধ্যে। বিদেশে বসে দল চালানোর সংস্কৃতি, অভ্যন্তরীণ দালালদের প্রভাব এবং লাগামহীন চাঁদাবাজির রাজনীতি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আরও কলুষিত করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও এ থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
শেষ কথা:
এভাবে চলতে থাকলে দেশের জনগণের আস্থা শুধু দলগুলোর ওপর থেকে নয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর থেকেও সরে যাবে। সময় এসেছে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক ও জনমুখী হতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত, কঠোর হাতে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও দালালি সংস্কৃতি দমন করে একটি স্থিতিশীল, ন্যায়ভিত্তিক রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।
ডা. এসএম খালিদুজ্জামান
ঢাকা-১৭ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী
মন্তব্য করুন