দিনভর নানা নাটকীয়তার পর মধ্যরাতে মোড় ঘুরে যায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রূপ নেয় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। শুরু হয় আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার পতনের দিকে গণপ্রতিরোধ যাত্রা।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গেলেই ‘রাজাকার’ ট্যাগ দিয়ে দমন-নির্যাতনের যে হাতিয়ার শেখ হাসিনা এত বছর ব্যবহার করেছিল, ১৪ জুলাই মধ্যরাতে সেই ট্যাগিংয়ের রাজনীতিকে ভাসিয়ে নিয়ে যান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ স্লোগানে একযোগে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশের সব কয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
সে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা আবাসিক হলের তালা ভেঙে সর্বপ্রথম রাস্তায় নেমে আসে। দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত গণপদযাত্রা কর্মসূচি। কোটা সংস্কারের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি প্রদানের এ কর্মসূচিতে অংশ নেন ঢাবি, জবি, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
বিকেলে গণভবনে ছিল সদ্য চীন সফর শেষ করে দেশে ফেরা শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হাসিনা দম্ভভরে জবাব দেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরাও পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?’
হাসিনার এ ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে এই প্রথম শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে কেউ স্বৈরাচার বলে অভিহিত করে। শিক্ষার্থীদের এই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের মধ্যে। হাসিনার পতন নিশ্চিতে শুরু হয়ে যায় গণ আন্দোলন। এমনকি ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যেও পড়ে যায় সংগঠন থেকে পদত্যাগের হিড়িক।
মন্তব্য করুন