বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পুনঃ আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক দেশের পোশাকশিল্পের বড় বাজার হুমকিতে পড়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারক বিভিন্ন বড় কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয়ের আদেশ কমিয়েছে।
দেশের রপ্তানি আয়ের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি আসে পোশাক শিল্প থেকে। সেই তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানির একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় বাজার হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তৈরি পোশাকশিল্প থেকে রপ্তানি আয় হয় ৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এর মধ্যে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার আসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকেই।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের ২ হাজার ৩৭৭টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপের কারনে এসব প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা দিন দিন বাড়ায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন দেশীয় ব্যবসায়ীরা। পোশাক রপ্তানিকারকরা নতুনভাবে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করায় এসব বিনিয়োগ এখন হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। সরকার যদি শুল্ক কমাতে ব্যর্থ হয়, তবে শুধু অর্ডার হ্রাস নয়, এর ফলে শ্রমিকের মজুরি, কর্মসংস্থান ও সামাজিক স্থিতিশীলতা সবই ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তারা জানান, এখনই ব্যবস্থা না নিলে শুধু অর্ডার নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে এই দেশের তৈরি পোশাক খাতের দীর্ঘদিনের অর্জন ও ভাবমূর্তি চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।
বিশ্বখ্যাত ওয়ালমার্ট বাংলাদেশের পোশাকের কিছু ক্রয়াদেশ পিছিয়েছে এবং কিছু ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দেওয়ায় এমন ঘটনা ঘটল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে এ তথ্য জানা যায়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ এবং দেশটির রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশ এ খাত থেকে আসে। কারখানা মালিকরা জানান, আগামী ১ আগস্ট থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত শুল্ক কার্যকর হলে ক্রয়াদেশ কমে যাবে। কারণ ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত খরচ তারা বহন করতে পারবেন না। প্যাট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শুল্কের কারণে ওয়ালমার্টের জন্য প্রায় ১০ লাখ সাঁতারের পোশাকের একটি ক্রয়াদেশ গত বৃহস্পতিবার স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও ইউনাইটেড ফোরামের প্যানেল লিডার মোহাম্মদ মফিজ উল্লাহ বাবলু জানান, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি যে শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে তা হলো পোশাক শিল্প। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করার জন্য ট্রাম্পের আরোপ করা ট্যারিফই যথেষ্ট। তিনি বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগে থেকেই গড়ে ১৫ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপিত ছিল। এর সঙ্গে নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক যোগ করা হলে মোট শুল্কের হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এত শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমরা কোনোভাবেই পোশাক রপ্তানি করতে পারব না। এর ফলে পোশাকশিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার আমরা হারাব। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক জানান, ট্রাম্পের শুল্ক একটি চক্রাকার আকারে প্রভাবিত হবে। এতে সবাই ভোগান্তিতে পড়বে। ন্যূনতম শুল্ক বাড়লেও সবাই আক্রান্ত হবে। শুল্ক বাড়ার ফলে ভোক্তার কাছে পণ্যের দাম বাড়বে। এতে বিক্রি সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে। শুল্কের এ চাপ সবাই সবার ওপর চাপানোর চেষ্টা করবে। আমাদের একক দেশের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। অন্যান্য দেশে পণ্য রপ্তানি বাড়াতে হবে। তাহলে এ ধরনের ঝুঁকি কমতে পারে।
মন্তব্য করুন