দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বড় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে, যার অংশ হিসেবে পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল সেখানকার বাসিন্দাদের দক্ষতার উন্নয়ন করে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে সরকার। একই সঙ্গে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় পর্যটকদের ওপর আরোপ করা হবে পরিবেশ সংরক্ষণ ফি। গতকাল শনিবার রাজধানী ঢাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরে সেন্টমার্টিনের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত এক সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ বৈঠকে আলোচনার পর সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের কাছ থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এই ফি সংগ্রহ করবে বলে জানানো হয়। আদায় করা অর্থে দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান পরিবেশ উপদেষ্টা। তবে পর্যটকদের ওপর কত টাকা ফি ধার্য করা হবে, সেটা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের অনেক দ্বীপ আছে; কিন্তু সেন্টমার্টিনের মতো প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দ্বীপ একটাই। এ দ্বীপের বাস্তুতন্ত্র রক্ষার অংশ হিসেবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। আগামী আগস্ট মাস থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’
রিজওয়ানা হাসান জানান, সেন্টমার্টিনে প্রাথমিকভাবে ৫০০ পরিবারকে নির্বাচন করা হয়েছে। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়ির আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন, চিপস তৈরি ও কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সেন্টমার্টিনে দুজন কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়কালে মৎস্য অধিদপ্তর সেন্টমার্টিনের জেলেদের জন্য সহায়তার পরিমাণ বাড়াবে বলেও জানান তিনি।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘অক্টোবর মাসের পর থেকে সেন্টমার্টিনে একবার ব্যবহার্য (সিঙ্গেল ইউজ) প্লাস্টিক প্রবেশ করবে না। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে অবহিত করা হবে। এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে প্লাস্টিকের বিকল্প নিয়ে আসতে হবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, সেন্টমার্টিনে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে পরিবেশ অধিদপ্তর।
সেন্টমার্টিন নিয়ে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) পক্ষ থেকে একটি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, পরিবেশ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান।
মন্তব্য করুন